May 8, 2024, 1:07 am

তথ্য ও সংবাদ শিরোনামঃ
ভালুকায় ধান ক্ষেতে পড়েছিলো গৃহবধূর গলাকাটা মরদেহ। নতুন করে আবাসিক গ্যাস সংযোগ দিতে চায় কোম্পানিগুলো, অবৈধ সংযোগ বন্ধ করতে না পেরে এমন প্রস্তাব। ভালুকায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত। ০৮ মে কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে দুপক্ষের প্রস্তুতি। নারায়ণগঞ্জে মামলা তুলে নিতে হুমকী দেওয়ায় ১২ জনের বিরুদ্ধে সাংবাদিকের মামলা। শার্শায় ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে নিতহ ১,আহত ৩ ভালুকায় পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ এড. এজে মোহাম্মদ আলীর দাফন সম্পন্ন সুন্দরবনের আগুন এখনও জ্বলছে ফায়ার সার্ভিস পৌঁছালেও আগুনের কাছে যেতে পারেনি। সুন্দরবনের আগুন, নেভানোর চেষ্টায় বন কর্মীরা। যশোর পরকীয়া রহস্য প্রেমিকার পরিকল্পনায় খুন, অবশেষে গ্রেফতার দুই। আনোয়ার হোসেন।নিজস্বপ্রতিনিধিঃ পরীক্ষার খাতায় মার্কস বেশি পেতে যৌন সম্পর্কের প্রস্তাব শিক্ষিকার। যশোর ও নড়াইল মহাসড়কের পিচ গলার ঘটনার তদন্তে দুদক। আরজেএফ’র উদ্যোগে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালিত। নারায়ণগঞ্জের বন্দরে সাংবাদিক বাদলকে হুমকি ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ৩ জনকে আসামী করে অভিযোগ ভালুকায় পথচারীদের মাঝে পানি ও স্যালাইন বিতরণ। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার রেজাল্ট ১২ মে রবিবার। ভালুকায় মে দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত। ভালুকায় তীব্র তাপদাহে সর্বসাধারণের মাঝে পানি ও খাবার সেলাইন বিতরণ। আইবি বাংলো’র অর্থ আত্নসাতকারী সাইফুজ্জামান চুন্নু ধরাছোঁয়ার বাইরে বেনাপোলে বাস চাপায় নিহত ১ গুরুতর আহত ১। যশোরের অভয়নগর উপজেলায় ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়দের পিটুনিতে একজনের মৃত্যু। রাজশাহী মহানগরীর কুখ্যাত মাদক সম্রাট রাব্বি খাঁ আটক ভালুকায় বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার নিজকাটা খালে ভাসছে টর্পেডোর আকৃতির একটি বস্তু। জার্নালিস্ট ইউনিটি সোসাইটি (জেইউএস) এর প্রকাশিত “ত্রিমোহনা” সহ নিজের লিখা ও সম্পাদিত বেশকিছু ব‌ই মাননীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীকে উপহার দিলেন। ত্রিশালে ডাকাত দলের তিন সদস্য আটক। বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্মরণসভা ওঅসচ্ছল পরিবারের মধ্যে আর্থিক সহায়তা বিতরণ। টংগিবাড়ী বাজারের পাশে ময়লার ভাগার ঝুঁকিতে পরিবেশ ও জনসাস্থ্য। টংগিবাড়ী উপজেলা প্রশাসন কতৃক তীব্র তাপদাহে সুপেয় পানির ব্যাবস্থা।

৩ হাজার কোটি টাকার ঋণেরবোঝা রেখে গেছেন এমপি আসলামুল হক

৩ হাজার কোটি টাকার ঋণেরবোঝা রেখে গেছেন এমপি আসলামুল হক

শুরুতেই জমি কেনাবেচার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নব্বইয়ের দশকে ব্যবসায় নাম লেখান আসলামুল হক। পরবর্তী সময়ে ছোটখাটো ঠিকাদারি, ট্রেডিং ও রিয়েল এস্টেটের ব্যবসায় যুক্ত হন তিনি।

২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর বিপুল গতিতে বাড়তে থাকে তার ব্যবসার পরিধি। নেমে পড়েন ভাড়ায় চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবসায়। অনুমোদন পেয়ে যান তিনটি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নামে ঋণ নিতে থাকেন বিভিন্ন ব্যাংক থেকে। যদিও শেষ পর্যন্ত ১০৮ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়া কোনোটিই আর উৎপাদনে যেতে পারেনি।

গত এক দশকে নানা অভিযোগে আলোচনায় এসেছিলেন আসলামুল হক। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের প্রতিবেদনে অভিযোগ তোলা হয়েছে, সদ্যপ্রয়াত এ এমপি শুধু বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ পাড়েই জায়গা দখল করেছিলেন ৫৪ একরের বেশি। বিদ্যুৎকেন্দ্র, রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ও অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার নামে এসব জায়গা দখল করা হয়েছে। দখলকৃত এসব জমিই পরবর্তী সময়ে জামানত হিসেবে বন্ধক দিয়েছেন ব্যাংকের কাছে। বিপরীতে ব্যাংক থেকে বের করে নিয়েছেন শত শত কোটি টাকা।

আসলামুল হকের বিভিন্ন কোম্পানির নামে নেয়া ঋণের পরিমাণ বর্তমানে ৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে আড়াই হাজার কোটি টাকাই নিয়েছেন ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে। আসলামুল হকের বিদ্যুৎকেন্দ্র ও রিয়েল এস্টেট কোম্পানির নামে দেয়া এ ঋণ এখন বেসরকারি ব্যাংকটির ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০০৮ সালের নির্বাচনে ঢাকা-১৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আসলামুল হক। এজন্য নির্বাচন কমিশনে সম্পদ বিবরণী জমা দিতে হয়েছিল তাকে। এতে উল্লেখ করা ছিল, রাজধানীর আমিনবাজার এলাকায় তার সাড়ে তিন বিঘা জমি রয়েছে। এর পাঁচ বছরের মাথায় ২০১৩ সালে একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য হলফনামা জমা দেন আসলামুল হক। এতে তিনি দেখিয়েছেন, তার মালিকানাধীন জমির পরিমাণ ১৪ হাজার ১৭৮ ডেসিমেল বা ১৪১ একরের বেশি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হলফনামায় উল্লেখ করা জমিগুলোকেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে ব্যবহার করেছেন তিনি।

আসলামুল হকের কোম্পানিগুলো ‘মাইশা গ্রুপের’ অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। গ্রুপটির কাছে শুধু বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকেরই ঋণ রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। অভিযোগ রয়েছে, এ ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে উপেক্ষিত হয়েছে ব্যাংকিংয়ের রীতিনীতি। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার পর্যবেক্ষণ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তার পরও আসলামুল হককে ঋণ দিয়েই গিয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। এখন চেষ্টা করেও গ্রুপটির কাছ থেকে ঋণ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। এরই মধ্যে কয়েক দফায় খেলাপি হয়ে পড়েছে মাইশা গ্রুপের ঋণ। প্রতিবারই সেগুলো পুনঃতফসিল করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম বুলবুল গণমাধ্যমকে বলেন, জীবদ্দশায় আসলামুল হক কিছু অর্থ পরিশোধ করছিলেন। এর আগে গ্রুপটির ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। এ মুহূর্তে ঋণটি নিয়মিত আছে। ঋণের বিপরীতে আসলামুল হকের অনেক সম্পদ ব্যাংকের কাছে জামানত আছে।

ব্যাংকের কাছে জামানত থাকা জমির বড় অংশ সরকার নিজের বলে দাবি করছে। আসলামুল হকের বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে উচ্ছেদ অভিযানও পরিচালনা করা হয়েছে। এ অবস্থায় জামানতের কতটুকু সম্পদ ন্যাশনাল ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে এএসএম বুলবুল বলেন, জমিগুলো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ আদালতে মামলা চলছে। উচ্ছেদ অভিযানের পরও আসলামুল হক আদালতে গিয়েছেন। আশা করছি, মাইশা গ্রুপ ঋণ পরিশোধ করতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও ঋণদাতা ব্যাংকগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আসলামুল হকের মালিকানাধীন সিএলসি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের নামে ঋণ রয়েছে ১ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। ঢাকার পার্শ্ববর্তী কেরানীগঞ্জে স্থাপিত এ রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা ১০৮ মেগাওয়াট। তার মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে বর্তমানে এটিই শুধু উৎপাদনে রয়েছে। এছাড়া তার মালিকানাধীন ঢাকা নর্থ পাওয়ার ইউটিলিটি কোম্পানি লিমিটেডের নামে ৩৭৮ কোটি টাকা ও ঢাকা ওয়েস্ট পাওয়ার লিমিটেডের নামে ৭৯ কোটি টাকার ব্যাংকঋণ রয়েছে।

আসলামুল হকের রিয়েল এস্টেট কোম্পানি মাইশা প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের নামে ঋণ রয়েছে ৬৫৬ কোটি টাকা। একই গ্রুপের কোম্পানি মাহিম রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের নামে ৩৮০ কোটি ও মাহিম ট্রেড লিংক লিমিটেডের নামে ১১ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। সব মিলিয়ে গ্রুপটির কাছে দেশের অর্ধডজন ব্যাংকের পাওনা প্রায় ৩ হাজার ৭৪ কোটি টাকা।

আসলামুল হকের রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সিএলসি পাওয়ার চালু হয় ২০১৭ সালে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নামে ঋণ রয়েছে ১ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। ১০৮ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এ কেন্দ্র থেকে ১৫ বছরের চুক্তিতে বিদ্যুৎ কিনছে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি)। ২০৩২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ কেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হবে। চালুর পর শুরু থেকেই বিতর্কে জড়িয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। বিপিডিবির তদন্তে উঠে আসা তথ্য বলছে, চালুর পর ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দৈনিক গড়ে ৯৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে সিএলসি পাওয়ার। যদিও এ সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিপিডিবির কাছে গড় মূল্য নিয়েছে দৈনিক ১০৮ মেগাওয়াট বিদ্যুতের। আদতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কখনোই ১০৮ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতায় যায়নি।

বিদ্যুৎ খাতের একাধিক উদ্যোক্তা ও ব্যাংকারদের ভাষ্য হলো, ১০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে ৩৫০-৪০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হয়। এ ধরনের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনো ব্যাংক ৩০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ দিলে সেটি ঝুঁকির মুখে থাকে। এ অবস্থায় ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপরীতে দেড় হাজার কোটি টাকার ঋণ থাকা মানেই হলো, সেটি আদায় হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

রাজধানীর গাবতলীতে ঢাকা নর্থ ইউটিলিটি নামে আরেকটি ১০৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন পান আসলামুল হক। ২০১২ সালের ১২ অক্টোবর বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল বিপিডিবির। এ চুক্তির পর সময় পেরিয়েছে প্রায় নয় বছর। এখনো শেষ হয়নি বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজ। কোম্পানিটির দাবি, গত নয় বছরে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি হয়েছে ৫০ শতাংশ।

তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদনে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে তাদের যুক্তি হলো চুক্তি অনুযায়ী যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসেনি ও ভাড়াভিত্তিক যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হয়েছে, সেগুলোর চুক্তি আর নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

আসলামুল হক ২০১১ সালে ঢাকা ওয়েস্ট পাওয়ার লিমিটেড নামে কেরানীগঞ্জের বছিলায় ১০৮ মেগাওয়াটের আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন পান। এক বছরের মধ্যে নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্রায় এক দশকে এর অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ। দীর্ঘ বিলম্বের কারণে বিপিডিবির একটি অভ্যন্তরীণ বৈঠকে কেন্দ্র দুটির নির্মাণ অনুমতি বাতিলের পক্ষে মত দেয়া হয়। উৎপাদনে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে এলেও এখনো এ দুই বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে ৪৫৭ কোটি টাকার ঋণ জমা হয়েছে ব্যাংকে।

এ বিষয়ে বিপিডিবির ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন পেলেও আসলামুল হকের মাত্র একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। বাকি দুটির অগ্রগতি একেবারেই সন্তোষজনক নয়। বিলম্বিত হওয়ায় কারণে বিপিডিবি থেকে মাইশা গ্রুপকে বেশ কয়েকবার নোটিসও দেয়া হয়েছে। এর পরও কয়েকবার তারা সময়সীমা বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছে। এখন তারা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জায়গা স্থানান্তরের জন্য বিপিডিবিতে আবেদন করেছেন। এ দুই বিদ্যুৎকেন্দ্র আদৌ হবে কিনা, সে বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।

এ বিষয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম বুলবুল গণমাধ্যমকে বলেন, জীবদ্দশায় আসলামুল হক কিছু অর্থ পরিশোধ করছিলেন। এর আগে গ্রুপটির ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। এ মুহূর্তে ঋণটি নিয়মিত আছে। ঋণের বিপরীতে আসলামুল হকের অনেক সম্পদ ব্যাংকের কাছে জামানত আছে।

ব্যাংকের কাছে জামানত থাকা জমির বড় অংশ সরকার নিজের বলে দাবি করছে। আসলামুল হকের বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে উচ্ছেদ অভিযানও পরিচালনা করা হয়েছে। এ অবস্থায় জামানতের কতটুকু সম্পদ ন্যাশনাল ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে এএসএম বুলবুল বলেন, জমিগুলো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ আদালতে মামলা চলছে। উচ্ছেদ অভিযানের পরও আসলামুল হক আদালতে গিয়েছেন। আশা করছি, মাইশা গ্রুপ ঋণ পরিশোধ করতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও ঋণদাতা ব্যাংকগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আসলামুল হকের মালিকানাধীন সিএলসি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের নামে ঋণ রয়েছে ১ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। ঢাকার পার্শ্ববর্তী কেরানীগঞ্জে স্থাপিত এ রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা ১০৮ মেগাওয়াট। তার মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে বর্তমানে এটিই শুধু উৎপাদনে রয়েছে। এছাড়া তার মালিকানাধীন ঢাকা নর্থ পাওয়ার ইউটিলিটি কোম্পানি লিমিটেডের নামে ৩৭৮ কোটি টাকা ও ঢাকা ওয়েস্ট পাওয়ার লিমিটেডের নামে ৭৯ কোটি টাকার ব্যাংকঋণ রয়েছে।

আসলামুল হকের রিয়েল এস্টেট কোম্পানি মাইশা প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের নামে ঋণ রয়েছে ৬৫৬ কোটি টাকা। একই গ্রুপের কোম্পানি মাহিম রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের নামে ৩৮০ কোটি ও মাহিম ট্রেড লিংক লিমিটেডের নামে ১১ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। সব মিলিয়ে গ্রুপটির কাছে দেশের অর্ধডজন ব্যাংকের পাওনা প্রায় ৩ হাজার ৭৪ কোটি টাকা।

আসলামুল হকের রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সিএলসি পাওয়ার চালু হয় ২০১৭ সালে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নামে ঋণ রয়েছে ১ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। ১০৮ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এ কেন্দ্র থেকে ১৫ বছরের চুক্তিতে বিদ্যুৎ কিনছে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি)। ২০৩২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ কেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হবে। চালুর পর শুরু থেকেই বিতর্কে জড়িয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। বিপিডিবির তদন্তে উঠে আসা তথ্য বলছে, চালুর পর ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দৈনিক গড়ে ৯৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে সিএলসি পাওয়ার। যদিও এ সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিপিডিবির কাছে গড় মূল্য নিয়েছে দৈনিক ১০৮ মেগাওয়াট বিদ্যুতের। আদতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কখনোই ১০৮ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতায় যায়নি।

বিদ্যুৎ খাতের একাধিক উদ্যোক্তা ও ব্যাংকারদের ভাষ্য হলো, ১০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে ৩৫০-৪০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হয়। এ ধরনের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনো ব্যাংক ৩০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ দিলে সেটি ঝুঁকির মুখে থাকে। এ অবস্থায় ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপরীতে দেড় হাজার কোটি টাকার ঋণ থাকা মানেই হলো, সেটি আদায় হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

রাজধানীর গাবতলীতে ঢাকা নর্থ ইউটিলিটি নামে আরেকটি ১০৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন পান আসলামুল হক। ২০১২ সালের ১২ অক্টোবর বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল বিপিডিবির। এ চুক্তির পর সময় পেরিয়েছে প্রায় নয় বছর। এখনো শেষ হয়নি বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজ। কোম্পানিটির দাবি, গত নয় বছরে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি হয়েছে ৫০ শতাংশ।

তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদনে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে তাদের যুক্তি হলো চুক্তি অনুযায়ী যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসেনি ও ভাড়াভিত্তিক যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হয়েছে, সেগুলোর চুক্তি আর নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

আসলামুল হক ২০১১ সালে ঢাকা ওয়েস্ট পাওয়ার লিমিটেড নামে কেরানীগঞ্জের বছিলায় ১০৮ মেগাওয়াটের আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন পান। এক বছরের মধ্যে নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্রায় এক দশকে এর অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ। দীর্ঘ বিলম্বের কারণে বিপিডিবির একটি অভ্যন্তরীণ বৈঠকে কেন্দ্র দুটির নির্মাণ অনুমতি বাতিলের পক্ষে মত দেয়া হয়। উৎপাদনে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে এলেও এখনো এ দুই বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে ৪৫৭ কোটি টাকার ঋণ জমা হয়েছে ব্যাংকে।

এ বিষয়ে বিপিডিবির ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন পেলেও আসলামুল হকের মাত্র একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। বাকি দুটির অগ্রগতি একেবারেই সন্তোষজনক নয়। বিলম্বিত হওয়ায় কারণে বিপিডিবি থেকে মাইশা গ্রুপকে বেশ কয়েকবার নোটিসও দেয়া হয়েছে। এর পরও কয়েকবার তারা সময়সীমা বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছে। এখন তারা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জায়গা স্থানান্তরের জন্য বিপিডিবিতে আবেদন করেছেন। এ দুই বিদ্যুৎকেন্দ্র আদৌ হবে কিনা, সে বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।

আমাদের প্রকাশিত তথ্য ও সংবাদ আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)

Design by Raytahost.com